এই আর্টিকেলে আমি ২৫ টি অন পেইজ অপ্টিমাইজেশনের ট্রিক্স বলব, এগুলির যথাযথ ব্যাবহার আপনাকে এনে দিতে পারে ভাল র্যাঙ্কিং। সবগুলিই সংক্ষেপে বলা হবে, যাতে আপনি এটি একটি লিস্টের মত করে ব্যাবহার করতে পারেন –
১. ডোমেইনের নাম। সবাই জানি, গুগলে এক্সাক্ট ম্যাচের বেইল নেই, কিন্তু আমেরিকানরা এখনো ৩০% এর বেশি ক্ষেত্রে বিং এবং ইয়াহু ব্যবহার করে (আমরা জানি, ইদানিং যাহা বিং তাহাই কার্যক্ষেত্রে হু, ইয়াহু)। বিং কিন্তু এখনো ডোমেইন নামের কাছাকাছি ম্যাচকে প্রাধান্য দেয়। তাই ডোমেইন নামে যদি পারশিয়াল ম্যাচকে পুরোপুরি অবহেলা করেন, তবে বিংয়ে ধরা খেতে হবে। অর্থাৎ ৩০% গ্রাহকের কাছে ধরা খেতে হবে।
২. ডোমেইন নামের জন্য নিশের শব্দটাই যে থাকতে হবে এমন কথা নাই, বরং ওই নিশে কোন্ শব্দগুলোর সার্চ ভলুম বেশ ভাল সে শব্দগুলো পারশিয়াল ম্যাচের জন্য বেশ কাজের।
৩. পেজলোড স্পিড। এখন টারগেট কান্ট্রিতে শেয়ার্ড হোস্টিঙে অ্যাভারেজ পেজলোড স্পিড হল এক সেকেন্ডের ৮৫ ভাগ (৮৫০ মিলি সেকেন্ড বা এমএস )। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির টপ লেভেল শেয়ার্ডগুলোর স্পিড হল ৩০০-৪০০ এমএস। অথচ এখন আদর্শ স্পিড ২০০ এমএস। চাইলেই কাভুম (KVM) ও ওপেন ভিজ (OpenVZ) ক্লাউড/ভারচুয়াল হোস্টিঙ নেয়া যায় যেগুলোতেও খরচ আহামরি বেশি নয়। বিশেষ করে আমরা যদি বিজনেসকে বিজনেস হিসাবে দেখি। তখন স্পিড হবে মাত্র ৪০ থেকে ১৫০ এমএস।
৪. শর্ট ইউ আর এল। ইউ আর এল গাছের মত ডাল উপডাল লতা পাতা না করে সরাসরি রুট ডোমেইন থেকে ছোট্ট ইউ আর এল করে নিলেই ভাল।
৫. শর্ট ইউ আর এল টাকে অলটারনেটিভ পেইজ টাইটেল হিসাবে ব্যবহার করা। অর্থাৎ আপনি পেজ টাইটেল দিয়েছেন ‘বেস্ট টোয়েন্টি ভাতের চাল রিভিউ ২০১৮’ আর উরালের নাম দিয়েছেন ’ভাতেরচাল.কম/টপ-চাল-গাইড’।
৬. পেজ টাইটেলকে ৭/৮ ওয়ার্ড এবং ৬০/৭০ ক্যারেক্টারের ভিতরে রাখা। যেন ইঞ্জিন টাইটেল কাটা না দেয়।
৭. কাছাকাছি বিষয়ে আলাদা পেইজ না করে এক পেইজের এক আরটিকেলে সব ভরে দেয়া। কাছাকাছি বিষয়ে আলাদা পেইজ থাকলে ছোট্ট সার্চ ভলুমের বেলায় সার্চ ইঞ্জিন খুশি হবে কিন্তু বড় সার্চ ভলুমে দেখা যাবে আমারটার অস্তিত্বই নাই। অথচ এক পেইজের এক আরটিকেলে সব ভরে দিলে সেটা ছোট ছোট ভলুম যেমন কাভার করবে তেমনি বড় ভলুমও কাভার করবে। যে কিওয়ার্ড টারগেট করিনি এমন বেশ কিছু কিওয়ার্ডও কাভার করবে।
৮. এক্কেবারে নিয়মিত সাইট আপডেট করা। এর পার্ট হিসেবে বলা যায়: প্রথম কথা হল নিয়মিত বিরতিতে আরটিকেল দেয়া। দিনে একটা, নয়তো সপ্তাহে দুটা, নয়তো মাসে চারটা না পারলে দুটা… এরচে কম হলে কি আর হয়!
৯. যখনি কোনও আরটিকেল দেবেন, তখনি সেটাকে কীভাবে সাইটের অন্যান্য আরটিকেলে লিংক বা মেনশন দেবেন তা ঠিক করে নেয়া।
১০. পুরনো আরটিকেলে মেনশন দেয়ার সময় কৃপণতা না করা। বিপুল প্রয়োজনীয় এলিমেন্ট। যেমন: পুরনো আরটিকেলে মেনশন দিচ্ছেন, এমন সময়ে সেটার কিছু বাক্য গঠন পরিবর্তন করলেন,
১১. সেটা কোন্ কোন্ কিওয়ার্ড এ রেঙ্ক পেয়েছে, তার মধ্যে কোন্ কোন্ কিওয়ার্ড আপনি আগে টারগেট করেননি কিন্তু পেয়ে বসে আছে, সেই কিওয়র্ডগুলোর জন্য এক দুই বাক্য হলেও অপটিমাইজ করা। ১০-১৫ মিনিট সময়ই লাগবে একজন এক্সপার্টের! ফলাফল? পুরনোটায় নতুন করে ৫০০% পর্যন্ত ট্রাফিক সহজেই।
১২. মেনশন দেয়ার সময় কিছু বানান ঠিক করে নিলেন, কিছু গ্রামার ঠিক করে নিলেন, যাবতীয় জটিল ও কঠিন রোগাক্রান্ত বাক্যকে সরল করে নিলেন, সিনোনিম দিলেন কিছু কিছু,
১৩. প্যারায় প্যারায় আপনার বর্ধিত নিশজ্ঞানের অংশ হিসাবে কিছু কথা বাড়তি দিলেন। আরটিকেলটা পুরনো, তখন আপনার এই নিশে এতটা জ্ঞান ছিল না।
১৪. খুব জরুরী, চলতি আমেরিকান ফ্রেজ কিছু ঢুকিয়ে দিলেন। যেমন, ‘এইটা আপনার ধীরে ধীরে বাড়বে’ না বলে নীল প্যাটেলের মত বললেন, ‘এইটাতে স্নোবল এফেক্ট হবে’। বা ‘আপনার পয়সা কম আসবে’ না বলে বললেন, ‘আপনি টেবিলে পয়সা ফেলে রেখে যাবেন’
১৫. এখনো কিন্তু পুরনো আরটিকেলে মেনশন দেয়ার সময়ে করা কারিশমার কথা বলছি। দেখবেন, আদ্যিকালে আপনি বা আপনার রাইটার তিনতলা বিল্ডিঙের সমান একেকটা প্যারা দিয়েছেন। প্যারা পড়তে গিয়ে পাঠকের প্যারাকে ছোট করার জন্য একটা প্যারাকে ছোট ছোট করলেন। (আমরা আর কবে পাঠক নিয়ে ভাবি? এট লিস্ট, মহামান্য স্পাইডার তো খুশি হবে!)
১৬. দেখবেন, অনেক প্যারাতেই চাইলে টাইটেল দেয়া যেতো, দেয়া হয়নি, দিয়ে দিলেন। ভাল অপটিমাইজেশন হল।
১৭. মেনশন দেয়ার সময় শুধু এক পাতার মেনশন দেয়াই দেখবেন কেন? লক্ষ্য করুন, ইতোমধ্যে আপনার সাইট কতটুকু ইভলভ হয়েছে। আরো কোন পাতার মেনশন দেয়া উচিত কিনা।
১৮. আউটবাউন্ডে কোন ব্রোকেন লিংক আছে নাকি? থাকতেই পারে, ভাইব্রাদারের সাথে লিংক বন্টন করেছেন- সে হয়তো নতুন উরালে নিয়ে গেছে তার আরটিকেলটাকে। তারও তো বিবর্তন চলছে উঠতি মারকেটার হিসাবে। অথবা, করেছিলেন পিবিএন, এখন সেইটাকে বছর পেরিয়ে গেছে আর হোস্টিং নবায়ন করা হয়নি বলে ব্রোকেন লিংক হয়ে বসে আছে। ব্রোকেন লিংকগুলোকে ঠিক করলেন বা নিদেনপক্ষে বাদ দিলেও গুগলের কাছে আসলেই ভাল লাগবে।
১৯. একটা প্রজেক্ট নিয়েই নিলেন। টাইটেলগুলোকে ইমেজ দিয়ে রিপ্লেস করবেন। ইমেজে টাইটেল লেখা থাকবে, সেইসাথে নান্দনিক ছবিও। আর এর ব্যাকগ্রাউন্ডে যে লেখাটা থাকার কথা সেটা সিএসএস দিয়ে দশ হাজার পিক্সেল দূরে ঠেলে দিলেন। ইঞ্জিন দেখবে লেখা সেখানেই আছে, ট্রাফিক দেখবে সেখানে সুন্দর ইমেজ, ইঞ্জিন ইমেজ দেখেও মুগ্ধ হবে।
২০. সিএসএস এর কথা যখন এসেই গেল, টাইপোগ্রাফি আর বাদ যায় কেন। আরটিকেলটাকে গড়পড়তা আরটিকেল না করে সুন্দর করে ট্যাগভিত্তিক করে নিলেন। সকল ইঞ্জিন খুবই খুশি হবে। স্পাইডাররাতো সারফেস ওয়েব থেকে খুশিতে লাফ দিয়ে ডার্ক ওয়েবে চলে যাবে। কাজটা প্রতিটা আরটিকেলে করতে লাগবে ৫ মিনিট। শিখতে লাগবে ১-৩ ঘন্টা।
ধরুন আপনার আরটিকেল ৩ হাজার ওয়ার্ড এর। এই আরটিকেলে মূলত মহাখন্ড আছে তিনটা। উপখন্ড আছে ১২ টা। এখন ৩ টা মহাখন্ডের প্রতিটাকে <article>…</article> এর ভিতরে নিয়ে এলেন। আর প্রতিটায় যে চারটা করে উপখন্ড আছে এবং টাইটেল ও ইমেজ আছে প্রতিটায়, সেগুলোর একেকটাকে <section>…<section> এর ভিতরে নিয়ে এলেন।
স্পাইডার এই খন্ড বিখন্ডকে আলাদা আলাদা করে দেখতে এবং মূল্যায়ন করতে (বাংলা কথায় রেঙ্ক দিতে) শিখবে।
২১. ইমেজ নিয়ে অবশ্য আমাদের মত অ্যামাজন ওয়ালাদের সমস্যা নেই। প্রচুর ইমেজ। তবু, চেষ্টা করলেন ৩০০ ওয়ার্ড পরপর রিলিভেন্ট ইমেজ দিতে। খুব খাবে। রিডার-স্পাইডার সবাই।
২২. আমরা সাধারণত আরটিকেলে ভিডিও দেই না। কাজ করে কূল পাই না ইউটিউব সামলাবো কখন? বা, নিজের যখন এ আরটিকেলের বিষয়ে ভিডিও তৈরি করা হয়নাই, অন্যর ভিডিওতে লিংক দিয়ে আমার কী লাভ? এখানেই ধরা।
অন্যর ভিডিওকেও যদি আপনার আরটিকেলে মেনশন করেন, সেটাও আপনারই লাভ। শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে ভিডিওটা যেন সুপার রিলিভেন্ট হয় এবং গুগলের টপে আছে এমন হয়। এতে গুগল অ্যাশিওর্ড হয় যে, আপনি আপনার নিশের অথরিটিগুলোকে চিনতে পারছেন। পাশাপাশি, ভিডিও থাকা মানেই আপনার সাইটের/পেজের মান বেড়ে গেল অনেকখানি।
২৩. আউটবাউন্ড লিংক দেয়ার বেলায়ও আমরা সাঙ্ঘাতিক কৃপণ। অথচ উল্টো হলেই ভাল। উপরের কারণেই। গুগল ধরে নিবে, এই ক্ষেত্রে আপনি অথরিটিগুলোকে চেনেন এবং অথরিটিগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখেন।
নিশ্চিন্তে BBC, CNN টাইপ চরম অথরিটি সাইটগুলোর অতি জরুরী পেজে লিংক দেন। বিশেষ করে সিস্টার নিশগুলোতে বা মাদার/চাইল্ড নিশে যেসব গ্রাউন্ডব্রেকিং আবিষ্কার হচ্ছে, সেসব বিষয় মেনশন করুন।
২৪. যদি মনে হয় ভিডিও দিলে ট্রাফিক ভাগবে, তাহলে ভিডিও দিন আরটিকেলের শেষের অর্ধেকে। সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না। আবার প্রথাগতভাবে একেবারে শেষে দেবেন না। গুগল চালাক হচ্ছে।
২৫. যদি কোনও আউটবাউন্ড লিংক দেয়ার সময় আপনার মনে হয়, ট্রাফিক এই ভাগল, ভাগতে দেবেন কেন? বিনা দ্বিধায় ‘ওপেন ইন নিউ ট্যাব’ টাইপ লিংক দিন। এখানে ক্যালকুলেটিভ হতে হবে, আপনার সব লিংক এভাবে দিলে সাইট বিরক্তিকর হবে ট্রাফিকের কাছে। তাই যেগুলো আসলেই মহা অথরিটি, মানুষজন চলেই যাবে সেসবে ক্লিক করে, সেগুলো শুধু নিউ ট্যাবে দিন।
তো আজ এই পর্যন্তই। অনেক কিছু বাদ থেকে গেল, ইচ্ছা আছে আরেকটি আর্টিকেলে আরো কিছু পয়েন্ট কাভার করব। দেখা যাক কি হয়!