দিন যত যাচ্ছে গুগল তত আপডেট হচ্ছে। একসময় গুগলে র্যাংকিং করা ছিল অন্যতম সহজ কাজের একটি। আপনার পেইজে ইচ্ছামত কিওয়ার্ড অনেক বার ইউজ করলেই সাইট র্যাংক পেয়ে যেত।
তারপর আসল ব্যাকলিঙ্কের খেলা। যার যত বেশি ব্যাক্লিঙ্ক, সে তত আগে থাকত সার্চ রেজাল্টে। তখন কোয়ালিটি খুব বেশি ম্যাটার করত না, ব্যাক্লিঙ্কের সংখ্যা বেশি থাকলেই হত।
কিন্তু দিন বদলেছে। গুগল এখন অনেক বেশি স্মার্ট আগে থেকে। এখন যেমন বেশি কিওয়ার্ড স্টাফিং করলে পেনাল্টি খেতে হয়, তেমনি কোয়ালিটি বিহীন ব্যাক্লিঙ্ক বেশি থাকলেই পেনাল্টি খেতে হয়।
তো এখন গুগলে র্যাঙ্ক করার জন্য প্রথম শর্ত হল কোয়ালিটি কন্টেন্ট ও অন পেজ অপ্টিমাইজেশন, এবং দ্বিতীয় মুখ্য বিষয় হল কোয়ালিটি ব্যাক্লিঙ্ক।
কিন্তু এসবের পরেও একটি ফ্যাক্ট্র অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ,যেটি হয় র্যাঙ্ক ব্রেইন।বর্তমানে র্যাঙ্ক ব্রেইন গুগলের তৃতীয় বৃহত্তম র্যাঙ্কিঙ ফ্যাক্টর। অথচ র্যাঙ্ক ব্রেইন শুনতেই ভয় ভয় লাগে (অন্ততপক্ষে আমার কাছে!)
র্যাঙ্ক ব্রেইন জিনিশটা কি?
গুগল আসলে দেখতে যায় ইউজাররা আপনার পেজ থেকে উপকৃত হচ্ছে নাকি নাহ। অর্থায়, আপনি ভাল অন পেজ ও অফ পেইজ অপ্টিমাইজেশন করে র্যাঙ্ক পেয়ে গেলেই সেখানে শেষ নয়, বরং গুগল তারপর দেখবে এই যে তারা আপনাকে প্রথম পেইজে যায়গা দিল, এটি আসলেই ইউজারদের কতটুকু কাজে দিচ্ছে।
এই গুগল কিভাবে বোঝে? দুটি ফ্যাক্টর দিয়ে –
- ক্লিক থ্রু রেট (কতজন ক্লিক করছে)
কথার কথা পঞ্চাশ জন সার্চ করল “Best Dog Foods”, এবং প্রতিটি সার্চের জন্যই প্রথম পেইজে আপনার সাইট আসল, এবং সাথে আসল বাকি ৯ টি ওয়েবসাইট। এখন এই পঞ্চাশ জনের কতজন বাকি সাইটগুলি না ক্লিক করে আপনার সাইটে ক্লিক করে প্রবেশ করল সেটিই হচ্ছে ক্লিক থ্রু রেট।
- ডোয়েল টাইম (কতক্ষণ পেজে থাকছে) –
আগের উদাহরণ দিয়েই বোঝানো যাক। ধরা যাক ১০ জন আপনার সাইটে আসল। এখন এই ১০ জন আপনার সাইটে কতক্ষণ থাকল সেটির এভারেজ হচ্ছেই দোয়েল টাইম। দশ জনের মোট ব্যয়কৃত সময়কে ১০ দিয়ে ভাগ করলে এভারেজ ডোয়েল টাইম পাওয়া যাবে।
তো, কথা হচ্ছে এই দুটি ফ্যাক্টর দিয়ে গুগল কিভাবে বোঝে যে আপনার সাইট ভালো না খারাপ?
ক্লিক থ্রু রেট দিয়ে বোঝা যায় কতজন ইউজার আপনার আর্টিকেলের টাইটেল দেখে বা মেটা ডেস্ক্রিপশন পড়ে আপনার সাইটের উপর বিশ্বাস করছে, এবং বাকি সাইটে না ঢুকে আপনার সাইটে ঢুকছে। গুগল এটাকে পজিটিভ সাইন মনে করে যে মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করছে।
আর ডোয়েল টাইমদিয়ে বোঝা যায় মানুষ আসলেই যা খুজতে আপনার সাইটে এসছিল তা পাচ্ছে কিনা। মনে করুন আপনি একটা মিথ্যা টাইটেল দিলেন যাতে করে মানুষ আপনার সাইটে ঢুকল এবং আপনার ক্লিক থ্রু রেট বাড়ল।
কিন্তু সাইটে এসে যখন তারা তাদের কাংখিত কন্টেন্ট পাবেনা তখন তারা কিন্তু ব্যাক বাটনে চাপ দিয়ে বের হয়ে যাবে, যেটাকে গুগল নেগেটিভ সাইন হিসাবে ধরবে।
অর্থাৎ ডোয়েল টাইমের মাধ্যমে বোঝা যায় মানুষ আসলেই আপনার সাইটে তার কাংখিত সমস্যার সমাধান পাচ্ছে কিনা। যদি পায়, তাহলে সে আপনার সাইটে বেশি সময় অবস্থান করবে এবং আপনার ডোয়েল টাইম বাড়বে এবং গুগল আপনাকে ভাল র্যাঙ্ক দিবে।
তো, এখন কথা হচ্ছে যে আপনি কিভাবে আপনার সাইটের এই দুটি ফ্যাক্টর ভাল করবেন –
A. ক্লিক থ্রু রেট নির্ভর করে এ দুটা জিনিসের উপর:
১. টাইটেল – আপনাকে আকর্ষনীয় এবং ক্যাচি টাইটেল ব্যাবহার করতে হবে।
২. মেটা ডাটা – আকর্ষনীয় মেটা ডেস্ক্রিপশন লিখতে হবে যাতে করে মানুষ বুঝতে পারে মেইন কন্টেন্টে কি কি আছে এবং ক্লিক করতে আগ্রহী হয়।
B. ডোয়েল টাইম নির্ভর করে মূলত এগুলোর উপর:
৩. প্রথম ইম্প্রেশন – আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন সুন্দর ও আকর্ষনীয় হউয়া চাই।
৪. ভাল অন পেইজ নেভিগেশন – একটা সুন্দর ও সহজ নেভিগেশন সিস্টেম চাই যাতে করে মানুষ সহজেই এক পেজ থেকে আরেক পেজে যেতে পারে।
৫. যা চেয়েছে তা পেয়েছে (টাইটেল ও মেটা ডাটায় যা ছিল, বিষয় তা-ই) – টাইটেল ও মেটা ডেস্ক্রিপশন এ যা প্রমিস করেছিলেন, মেইন আর্টিকেলেও যাতে সে জিনিসগুলিই থাকে।
৬. প্রাসঙ্গিক অন্য আরটিকেলের লিংক – একই টপিকে আপনার সাইটের অন্য আর্টিকেলের লিংক সংযুক্ত করুন যাতে করে মানুষ এই আর্টিকেল পড়া শেষে অন্য আর্টিকেলে যায় এবং ডোয়েল টাইম বাড়ে।
১. টাইটেলে করণীয়:
* সংখ্যা, পারসেন্টেজ, সন, ব্রাকেড ব্যবহার – এগুলি ইউজ করলে বেশি আকৃষ্ট হয় টাইটেলের প্রতি, সাইকোলজিকাল ফ্যাক্টর বলতে পারেন।
* কিওয়ার্ড ব্যবহার – যে টপিকে সার্চ হয়েছে সেই টপিকের কিওয়ার্ড রাখার চেষ্টা করবেন।
* সলুশন অফার – যে সমস্যায় পড়ে একজন ইউজার সার্চ টি করেছে, সেটির সমাধান যে এখানে আছে সেটি বোঝাতে হবে।
* অর্গানিক লুক – জিনিস্টাকে যতটুকু সম্ভব ন্যাচারাল রাখার চেষ্টা করবেন, মানুষ যেন এরকম না ভাবে যে আপনি তাকে জোর করে সাইটে নিতে চাচ্ছেন।
২. মেটা ডাটায় করণীয়:
* অর্গানিক আলাপের ছল – এমন ভাবে লিখুন যাতে মনে হয় এটি অরিজিনাল আর্টিকেলের একটি অংশ।
* প্রাসঙ্গিক শব্দ সম্ভার – যে বিষ্যে আর্টিকেল লিখেছেন সেটির সাথে প্রাসংগিক কিছু শব্দ এখানে থাকা চাই।
* সলুশন অফার – সমস্যার সমাধান অফার করুন।
* প্রাসঙ্গিক প্রোডাক্টের নাম – টপিকের সাথে যায় এমন প্রোডাক্টের নাম ব্যবহার করুন।
৩. প্রথম ইম্প্রেশন নির্ভর করে:
ক. পেজের লোডটাইম (লোডে দেরি হলে অনেকেই ক্লিকব্যাক করবে। এজন্য কী করবেন? )
* কম অ্যাড অন জিনিসপত্র থিমে ব্যবহার
* ইমেজ অপ্টিমাইজ করুন
* ভাল মানের স্পিডি হোস্টিঙ ব্যবহার করুন।
খ. টাইটেলের ঠিক নিচের দু তিন প্যারার লেখা
* আকর্ষণীয় ফন্ট, ফন্ট সাইজ ও সহজ কালার ব্যবহার করুন।
* বাম পাশ থেকেই লেখা শুরু করুণ।
* প্রথম বাক্য ছোট রাখুন।
* প্রথম প্যারা ছোট রাখুন।
* গ্রাহকের সমস্যার সাথে একমত পোষণ করুণ এবং সেই সমস্যার সমাধান যে এই আর্টিকেলে আছে সেটি বোঝান।
* সমাধানের একটা নমুনামূলক আলাপ করুণ আপনার প্রমিসটি ভ্যালিডেট করার জন্য এবং নিচে কী আছে সে লক্ষণ দেখানো
গ. ব্যানার এলাকা
* মোটামুটি ভাল লোগো ব্যবহার করুন।
* মোটামুটি রিচ নেভিগেশন বার হোম ব্যবহার করুন।… অ্যাবাউট
* মোটামুটি ভাল একটা ফিচার্ড ইমেজ ব্যবহার করুন।
ঘ. সাইডবার
( * সাইডবারে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য/আরটিকেলের লিংক দিয়ে রাখুন যাতে মানুষ সেগুলোউ পড়তে পারে।
* প্রাসঙ্গিক আকর্ষণীয় ইমেজ ব্যবহার করুন যাতে ইউজার আকৃষ্ট হয়।
* আরটিকেলের সূচিপত্রও থাকতে পারে, এতে আর্টিকেল নেভিগেট করা সহজ হয়।
৪. ভাল অন পেইজ নেভিগেশন অর্থাৎ সূচিপত্র:
* আপার ফোল্ডেই সূচিপত্র দেখা যাবে অথবা আপার ফোল্ডর ঠিক নিচে
* সাইডবারে থাকতে পারে
* সূচিপত্র বিস্তারিত হবে না, অর্থাৎ প্রতিটা হেডিঙ টু হেডিঙ থ্রি’র সব কথা থাকবে না, জিস্ট থাকবে
* আবার এক শব্দে ব্যাখ্যা হওয়ার চেয়ে দু-তিন শব্দে হলে ভাল
৫. যা চেয়েছে তা পেয়েছে:
* পপুলার সাজেশনগুলোকে মূল্য দিন অর্থাৎ বেস্ট সেলার
* এবং অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা যেগুলোকে সাজেস্ট করে সেগুলোকেও বিবেচনা করুন।
* তাদের বাজেটকে মূল্য দিন, অর্থাৎ সেরা মানে সবচে দামীটা শুধু নয়, বাজেট অনুযায়ী প্রোডাক্ট সাজেস্ট করুন।
* ভেরিয়েশন রাখুন, একমুখী প্রোডাক্ট সাজেস্ট করা ভাল নয়
* চমক রাখুন, অর্থাৎ ভাল কিছু যা সে ভাবেনি
* বিশেষ মূল্য দিন প্রোজ এবং কন্স এ
৬. প্রাসঙ্গিক অন্য আরটিকেলের লিংক:
* ফলে ট্রাফিকের বিশ্বাস জন্মাবে যে এখানে এই টপিক নিয়ে কাজ হয়
* তারা ক্লিক ব্যাক না করে এটা দেখা শেষ করে আপনার অন্য কোনও আরটিকেলে যেতে পারে সে সুযোগ রাখুন, ডোয়েল টাইম খুব বেশি বেড়ে গেল।
লক্ষ্যণীয়, র্যাঙ্ক ব্রেইন ভাল কাজ করে প্রথম ও দ্বিতীয় পাতায়। কিন্তু আপনার প্রস্তুতি যদি ভাল থাকে র্যাঙ্ক ব্রেইনের জন্য, তবে ভেতরের দিকের পাতাতেও তা কিছুটা প্রভাব ফেলবে।
সবকিছু ইমপ্লিমেন্ট করুন এবং আমাকে রেজাল্ট জানান।