“নিশ সাইটের জন্য ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট আইডিয়া জেনারেট করবো কিভাবে?” এই আর্টিকেল সিরিজের প্রথম পর্বে বিভিন্ন ধরনের ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বে দেখাবো কিভাবে আপনি ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট এর জন্য আইডিয়া জেনারেট করতে পারেন –
ইনফর্মেটিভ আইডিয়া রিসার্চ
মেথড ১- পপুলার কন্টেন্ট ফাইন্ডার
কতগুলো টুলস সপর্কে আমরা অনেকে জানি, যেগুলো যেকোণ টপিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে সর্বাধিক শেয়ার হওয়া কন্টেন্টগুলো এনে দেখাতে পারে। যেহেতু কন্টেন্টগুলো অলরেডি পপুলার, সেগুলোর উপর নতুন করে লিখলে সেটি মানুষ অবশ্যই পছন্দ করবে।
তবে এক্ষেরে রাইটারকে আপনার সতর্ক করে দিতে হবে, যাতে কন্টেন্ট অনেক বেশী ভ্যালু অ্যাড করা হয়। অন্যথায় একই টপিকে শত শত কন্টেন্টের ভেতরে আপনার কন্টেন্টের(পড়ুন সাইটের) কথা কারো মনেই থাকবেনা।
তো, এমন কিছু পপুলার কন্টেন্ট গিয়ে কিভাবে টাইটেল রিসার্চ করা যায় দেখে আসি-
Ahrefs
Ahrefs এর কন্টেন্ট এক্সপ্লোরার অনেক কার্যকরী একটু টুল। যেকোণ কীওয়ার্ড একোটূ স্পেসিফিক করে লিখলে তারা বেশ কার্যকরী কিছু পপুলার কন্টেন্ট দেখায়। কন্টেন্টগুলো সোশ্যাল শেয়ার বা ব্যাকলিংক, দুই ফিল্টারের মাধ্যমেই দেখা যায়। এবং তার সাথে সেই কন্টেন্ট টাইটেল এড্রেস সহ এক্সট্রাক্ট করে নেয়া যায়। যেটি রিসার্চের কাজ দ্রুততর করে।
BuzzSumo
আমার নিজের খুব পছন্দের একটু টুল। যদিও Ahrefs এর মত নানারকম ফিল্টার নেই এতে, কিন্তু এই টুলের এডভান্সড সার্চ ফিচার ব্যবহার করে আপনি অনেকভাবেই সোশ্যাল মিডিয়াতে অল্প জনপ্রিয় থেকে শুরু করে একেবারে ভাইরাল- যেকোণ টাইটেল বের করে নিতে পারেন।
যেমন, BuzzSumo তে যদি আপনি “tips” baby stroller -review লিখে সার্চ করেন, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেবি স্ট্রলার রিলেটেড কন্টেন্ট, যেগুলোতে Tips শব্দটি আছে, এবং Review শব্দটি নেই, সেই ধরণের কন্টেন্ট আইডিয়া পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ আপনার সামনে যা আসছে সবই আইডিয়াল ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট। প্রায় কোন ফিল্টারিংই করতে হচ্ছেনা এরপর আর।
eHow
আরেকটি টুল, যার মাধ্যমে শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া নয়, বরং বিভিন্ন ফোরাম থেকেও পপুলার কন্টেন্ট বের করে দেখানো হয়। এবং এদের দেখানো প্রতিটা টাইটেলের উপরই এদের নিজেদের লিখা একটি কন্টেন্ট থাকে। যদিও কোণ ধরনের এডভান্সড সার্চ বা ফিল্টারিং এর সুযোগ পাবেননা আপনি, তবেও এরপরও এটি ভালো একটি রিসোর্স।
মেথড ২- সোশ্যাল মিডিয়া মাইনিং
Quora
তথ্যগত রিসার্চ এবং ট্রাফিক জেনারশনের জন্য Quora অসাধারণ একটি সাইট। যদিও এটি একটি সোশ্যাল মিডিয়া। তবে এখানে ছবি, চেক-ইন বা কোণ ফাও প্যাচাল নেই। আছে শুধুমাত্র বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর।
যেকোণ বিষয়ে একজন মানুষ প্রশ্ন করে/টপিক বা ব্লগ সৃষ্টি করে সেটিতে ওই বিষয়ের এক্সপার্টদের সরাসরি আমন্ত্রণ জানানো হয় আলোচনার জন্য। এবং প্রায়ক্ষেত্রেই তারা সানন্দে অংশগ্রহণ করেন। তাদের সেই প্রশ্নোত্তর দেখতে থাকলে আপনার মাথায় শুধুমাত্র কন্টেন্ট আইডিয়া নয়, প্রোডাক্টের নানান খুটিনাটি, ব্যবহার, সমস্যা-সমাধান ইত্যাদি ধারণা পাবেন। যেই ধারণা থেকে পরবর্তিতে আপনি আপনার সাইটের ব্লগগে একটি কমপ্লিট নলেজ সেন্টারে পরিনত করতে পারেন।
তবে সর্বোচ্চ আউটপুটের জন্য শুধুমাত্র প্রশ্নোত্তর না দেখে বিভিন্ন টপিক, ব্লগ ইত্যাদিতেও ঢুঁ মারতে
Reddit নিজেদেরকে বলে The Front Page of Internet. যার অনেকটাই বাস্তব। নানান কারণে আমেরিকানরা রেডিটে তথ্য শেয়ার আর কালেক্ট করতে পছন্দ করে। রেডিটের সবচেয়ে চমতকার বিষয় হল Quora এর মত শুধুমাত্র প্রশ্নোত্তরেই এটি সীমাবদ্ধ নয়।
বরং বিষয়ভিত্তিক ডিসকাশন, মতামত প্রচার, নিউজ শেয়ারিং, জরিপ- ইত্যাদি সব ধরণের কন্টেন্টই এখানে আছে। এক হিসেবে, এই বিষয়টা সরাসরি ইনফর্মেটিভ টাইটেল খোজার জন্য একটু কঠিন যায়গা।
একেবারে স্পেসিফিক কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ দিলে অবশ্য বেশ আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া যায়।
যেমন নিচের মত-
আর এখানে সরাসরি সার্চ না দিয়ে সাবরেডিট অ্যানালাইসিস করে আরো কাংখিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তবে সাবরেডিটের আলোচনাগুলো একেবারেই ন্যারো হওয়ায় আপনার বড়সড় ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট আইডিয়া পেতে বেশ বেগ পেতে হবে।
মেথড ৩- গুগোল SERP অ্যানালাইসিস
আগেই বলে নিচ্ছি, এই মেথডটা বেশ খানিকটা জটিল। নিশ সাইটের ইনফর্মেটিভ কন্টেন্ট যদি আপনার খুব বড় মাথাব্যাথা না হয়ে থাকে, তাহলে এই মেথড আপনার জন্য নয়।
এই পদ্ধতিটির সারমর্ম হচ্ছে, আমরা একটি কম্পিটিটরের নির্দিষ্ট একটি নিশের উপর যতগুলো আর্টিকেল পাবলিশ হয়েছে সবগুলো দেখবো এবং সেখান থেকে রিভিউ, লিস্টিং ইত্যাদি বাদ দিয়ে রিসোর্স কন্টেন্ট গুলোই রাখবো। সবশেষে ম্যানুয়ালি টাইটেলগুলোকে গ্রুপিং করে আমাদের মত করে টাইটেল আইডিয়া জেনারেট করবো। এবং সবশেষে একই পদ্ধতিতে ৩-৬ টি বড় কম্পিটিটরদের ডাটাবেইজ থেকে আমাদের মত করে কন্টেন্ট আইডিয়া বের করবো।
স্টেপ ১- টুলস এবং সেটিংস কাস্টমাইজ করে নেয়া
প্রথমেই গুগোল সার্চ সেটিংসে গিয়ে যেকোণ সার্চ টার্মের জণ্য প্রতি পেইজে রেজাল্টের সংখ্যা চেঞ্জ করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে ১০ টি রেজাল্টের জায়গার আপনি ২০-৫০ টি করে দিতে পারেন। এই অপশনটি পাবেন নিচের মতন করে-
এরপর GInfinity নামের একটি ক্রোম এক্সটেনশন ইন্সটল করে নিতে হবে। এতে করে, আপনি যত ইচ্ছা তত সার্চ রেজাল্ট দেখে নিতে পারবেন, কোণ ধরণের Next বাটন ক্লিক না করেই।
প্লাগিনটি এখানে পাবেন।
ফাইনালি, গুগোল সার্চ রেজাল্ট এক্সট্রাক্ট করার জন্য একটি বুকমারলেট এড করে নিতে হবে আপনার ব্রাউজারের বুকমার্ক বার-এ। কাজটি করার জন্য এই পোস্টের মাঝামাঝি অংশ থেকে নিচের দেখানো বক্সটিকে(Google SERPs Extractor) ড্রাগ করে আপনার ব্রাউজারের বুকমার্ক বারে ড্রপ করুন। গুগোল ক্রোমে বুকমার্ক বার না আসলে Ctrl+Shift+B প্রেস করুন।
অল ডান!
স্টেপ ২- গুগোল এডভান্সড সার্চ
এবার আপনার নিশের টপ কম্পিটিটরদের সম্পূর্ন সাইট থেকে ইনফর্মেটিভ আইডিয়া হ্যাক করবার পালা। আপনার ইন্ডাস্ট্রির যেকোণ পাচটি টপ রেটেড সাইটের এড্রেস কালেক্ট করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনি যেই প্রোডাক্টের ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট রিসার্চ করছেন যেই প্রোডাক্ট নিয়ে তাদের প্রত্যেকের যথেষ্ট পরিমাণ পাবলিকেশন আছে।
ধরুন আমার নিশ হল Baby Stroller এবং আমার নিশের অথরিটি হচ্ছে www.thebump.com
তো এই সাইটে Baby Stroller নিয়ে যতগুলো কন্টেন্ট পাবলিশ হয়েছে সেগুলো দেখার জন্য আমি
intitle:stroller site:https://www.thebump.com/
-এভাবে সার্চ করবো।
এরপর ইতিমধ্যে আপনার বুকমার্ক বারে থাকা Google SERPs Extractor -এ ক্লিক করলে প্রতিটি সার্চ রেজাল্ট এড্রেস আর টাইটেল সহ লিস্ট আকারে চলে আসবে। আপনি এরপর এগুলোকে কপি করে একটা এক্সেল শীটে কালেক্ট করতে পারেন।
Google SERP Extractor বুকমারলেট থেকে প্রাপ্ত ডাটা
প্রাপ্ত ডাটা এক্সেল শীটে কপি-পেস্ট করার পর
৩-৫ টি বড় সাইট থেকে এই কাজ করা হলে যে ডাটাবেইস হবে, তা শখানেক কার্যকরী ইনফর্মেটিভ টাইটেল জেনারেট করার জন্য যথেষ্ট।
স্টেপ ৩- ফিল্টারিং
এবার কন্টেন্ট টাইটেলগুলো থেকে সার্চ করে করে ‘review’-সম্বলিত পেইজগুলো বাদ দিলেই আপনার কাজ শেষ। ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে হাজার খানেক আইডিয়ার সাগরে হাবুডুবু খাবেন আপনি। এর মধ্য থেকে আপনার বাজেট আর প্ল্যান অনুযায়ী যেকোণ ধরণের টাইটেল বের করে নিতে পারেন। এমনি সরাসরি টাইটেল কপি করে নিলেও সমস্যা নেই।
শেষ কথা
কমবেশী সব অভিজ্ঞ মার্কেটারেরাই সাজেশন দিয়ে থাকেন যে, আপনি যেই বিষয়ে ইন্টারেস্টেড সেই বিষয়ে সাইট তৈরী করতে। এর অন্যতম কারণ হল, এর মাধ্যমে আপনি নিজের মধ্যে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং কন্টেন্ট কনজিউমার- দুটো সত্ত্বাই ধারণ করতে পারবেন।
যেমন ফটোগ্রাফীর কথাই ধরুন। আপনি যদি ফটোগ্রাফার হোন, সেক্ষেত্রে আপনার ফটোগ্রাফী ব্লগে রিডাররা কি কি ধরণের আর্টিকেল পড়তে চাইবে সেটা জানার জন্য আপনার খুব বেশী রিসার্চ করতে হবেনা।
প্রতিনিয়ত আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আপনি সেগুলো বুঝতে পারবেন। যেটি হয়তো একজন নন-ফটোগ্রাফারের পক্ষে বুঝতে হলে গলগর্ধম হয়ে যেতে হত। পাশাপাশি বাড়তি পাওনা হিসেবে আপনি যদি ডিএসএলআর ক্যামেরার অ্যাফিলিয়েট করতে চান, আপনার পক্ষে সেগুলো রিভিউ করাও হবে অনেকগুণ সহজ।
একই ধরণের কথাবার্তা আমাজন এফিলিয়েটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি যদি নিশ সাইটের ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট এর আইডিয়াশূন্যতায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেই নিশ আপনার প্যাশনের, পছন্দের যায়গা না। সুতরাং যারা নতুন সাইট শুরু করছেন, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে নিশ সিলেকশনের সময় আপনার নিজের নিশটায় কতটুকু দখল আছে সেটুকু একবার মাথায় রাখবেন।
ধন্যবাদ। ২ পর্বের এই আর্টিকেল সিরিজটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন নাহ।